মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » Default Category | কলেজ | মাধ্যমিক বিদ্যালয় | সাক্ষাৎকার » ছাত্রীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে - সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম, অধ্যক্ষ, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ
ছাত্রীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে - সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম, অধ্যক্ষ, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ
সমাজজীবন থেকে নিরক্ষরতার অন্ধকার দূর হোক। সকলের জীবনে শিক্ষার আলো উদ্ভাসিত হোক’, এই লক্ষ্য নিয়েই ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে সেন্টফ্রান্সিস জেভিয়াস গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। কথা গুলো বলছিলেন লক্ষ্রীবাজারে অবস্খিত সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম। শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নিতে তিনি জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড এবং ভারত সফর করেছেন।সম্প্রতি শিক্ষাবিচিত্রাকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শিক্ষাবিচিত্রার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শান্ত সিংহ।
শিক্ষাবিচিত্রা: আপনার প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে ”চাচ্ছি?
সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম: আমাদের প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-স্কুল পর্যায়ে শুধমাত্র প্রথম শ্রেণিতে লটারীর মাধ্যমে ভর্তি নেয়া হয়। তবে বিভিন্ন ক্লাসে আসন খালি হওয়া সাপেক্ষে জানুয়ারী মাসে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেয়া হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪টি সেকশনে পাঠদান করা হয়। ছুটির পর অভিভাবকদের না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে নিরাপদে রাখা হয়। শ্রেণি ও সেমিস্টার পরীক্ষা শেষে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এই সভার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর মূল্যায়ণ পত্র অভিভাবককে দেয়া হয়। ছাত্রীদের যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন কার্যক্রম। জেভেরিয়ান ডিবেটিং ক্লাব, জেভেরিয়ান বিজ্ঞান ক্লাব, জেভেরিয়ান ইংরেজি ক্লাব, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ম্যাগাজিন প্রকাশ, বিজ্ঞান মেলা, দেয়ালিকা প্রদর্শণ, হস্তশিল্প প্রদর্শণ, ক্লাস পার্টি, পিঠা উৎসব, রচনা, হাতের লেখা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নারী দিবস, শিশুদিবস, শিক্ষক দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বিদ্যালয়ে এসে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।
শিক্ষাবিচিত্রা: আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান সম্পর্কে বলুন?
সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম: প্রতি বছর শত ভাগ পাশসহ সন্তোষজনক ফলাফলের দৃষ্টান্তরাখে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ শিক্ষকই মাস্টার্স পাশ এবং বিএড ও এমএড ডিগ্রি অর্জনকৃত। দক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ফলে প্রতি বছরই সাধারণ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি অর্জনের পাশাপাশি এস.এস.সি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী অর্জন করছে জি.পি.এ. ৫.০০। জেভেরিয়ান ডিবেটিং ক্লাব, জেভেরিয়ান বিজ্ঞান ক্লাব, জেভেরিয়ান ইংরেজি ক্লাব, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রদর্শন, হাতের লেখা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতির মাধ্যমে ছাত্রীদের সুপ্তপ্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। সন্তোষজনক ফলাফলের পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করছে। এ জন্য সীমিত সংখ্যক আসনে প্রতি বছরই যুদ্ধ শুরু হয়। বিজ্ঞান মেলা, সাংস্কৃতিক ও বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় রাজধানীর স্বনামধন্য বিদ্যালয় থেকে একাধিক পুরস্কার প্রাপ্তির খ্যাতি রয়েছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
শিক্ষাবিচিত্রা: এখানে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারকে কিভাবে উৎসাহিত করা হয় এবং কি ধরনের সুবিধা রয়েছে।
সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম: শিক্ষা ও প্রযুক্তি একটি অপরটির পরিপূরক। শুধু প্রযুক্তিগত শিক্ষা নয় বরং শিক্ষাদানে ও প্রযুক্তির ব্যবহার আজকাল বেশ জনপ্রিয়। তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। আমাদের আছে কম্পিউটার ল্যাব, যেখানে অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী ব্যবহারিক ক্লাস নিয়ে থাকেন। ছাত্রীদের জন্য তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবহারিক ক্লাস বাধ্যতামূলক। এছাড়া শিক্ষকমন্ডলী বিভিন্ন সময় প্রজেক্টরে ক্লাস নিয়ে থাকেন। এর ফলে তথ্য ও প্রযুক্তির প্রতি ছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞান বিভাগ, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য আমাদের আছে আলাদা কক্ষ, যেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতির সমাহার। তথ্য ও প্রযুক্তির প্রতি গুরুত্বারোপ করে আমরা গঠন করেছি‘জেভেরিয়ান বিজ্ঞান ক্লাব’। এ ক্লাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো - বৈজ্ঞানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে ছাত্রীদের প্রজ্বলিত করা এবং ছাত্রীদের যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা। লক্ষ্য অর্জনে ছাত্রীদের কার্যক্রম হলো- আধুনিক বিশ্বের নতুন নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে আলোচনা করা; বিজ্ঞান প্রজেক্ট, অলিম্পিয়াড ও ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা, বৈজ্ঞানিকগবেষণায়নিজেদের নিয়োজিতরাখা।
শিক্ষাবিচিত্রা: আমাদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা শেষে অনিশ্চত জব মার্কেট সম্পর্কে হতাশাগ্রস্ততা লক্ষ্য করা যায়। এ প্রসঙ্গে আপনার পরামর্শ কি?
সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম: আমাদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা শেষে অনিশ্চিত জব মার্কেট সম্পর্কে হতাশা গ্রস্থতা লক্ষ্য করা যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষার ওপর অত্যদিক জোর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের এই মানসিকতায় গড়ে তুলতে হবে যে, শিক্ষা জীবন শেষে চাকরী না পেলেই জীবন ব্যর্থ হয়ে যায় না। চাকরী ছাড়াও জীবিকা নির্বাহ করার মতো আরো অনেক কাজ আছে। শিক্ষার্থীরা যেন আতœকর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো কিছ ুএকটা করতে পারে সে ব্যাপারে হাতে কলমে বাস্তব শিক্ষা দিতে হবে। চাকরী বাজারে প্রবেশের প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক বা দলীয় বিবেচনায় নিয়োগদান সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করতে হবে। অর্থের বিনিময়ে বা অসদোপায় অবলম্বনের মাধ্যমে নিয়োগদান বন্ধ করতে হবে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় এনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা আনতে হবে। প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগ দানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা গ্রস্থতার অবসান হতে পারে বলে আমি মনে করি।
শিক্ষাবিচিত্রা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ বাড়ানোর লক্ষ্যে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে অনেক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মনে করেন। আপনার বক্তব্য জানতে চাচ্ছি।
সিস্টার মেরী পালমা, আর.এন.ডি.এম: শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রথমেই আমাদের সিলেবাস বা পাঠ্য বইয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক বলে আমি মনে করি। আমাদের পাঠ্য বই গুলোতে এমন অনেক বিষয়ের অবতারণা করা হয়ে থাকে যার সুফল-কুফল কোনো কিছুই বোধগম্য নয়, বরং সেক্ষেত্রে এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করা যেতে পারে যে, যা অধ্যয়নে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতিবাচক নৈতিক মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। প্রয়োজনে নৈতিক শিক্ষা সংবলিত নতুন নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করা যেতে পারে। প্রিন্টমিডিয়া, ইলিকট্রিক মিডিয়াসহ নানা প্রচার মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। বিনোদন মিডিয়াগুলো বিনোদনের অন্তরালে নীতি-আদর্শের বানী প্রচারে ভূমিকা রাখতে পারে। নৈতিক শিক্ষাই আমাদের জীবনে আসল শিক্ষা। যে শিক্ষায় নৈতিক শিক্ষা নেই সেই শিক্ষা আমাদের শিক্ষিত করবে বটে, সত্যিকার সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে না। আমাদের পাশবিক প্রবৃত্তি গুলোকে অবদমিত রেখে সত্যিকার মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হলে নৈতিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।