রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » বিশ্ববিদ্যালয় | ভর্তি পরীক্ষা | শিক্ষা | শিক্ষাঙ্গন » অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে
অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে
ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’। তবে চলমান পরিস্থিতিতে সশরীরে পরীক্ষা না নিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পরীক্ষা আয়োজনের দাবি তুলেছিলেন কেউ কেউ। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এতে ইতিবাচক সম্মতিও দিয়েছিলেন, তবে নানা কারণে সেটা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনলাইনে ভর্তি আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় কয়েকটি সমস্যা সামনে আসায় আপাতদৃষ্টিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে সেটি একটি মোবাইল বেজড সফটওয়্যার। সে হিসেবে সব শিক্ষার্থীর কাছে স্মার্টফোন থাকা আবশ্যক। আর সব জায়গায় অধিক গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমাদের দেশে যেটি একেবারেই অসম্ভব। এছাড়া পরীক্ষার সময় যদি কোথাও ইন্টারনেট সংযোগ চলে যায় তাহলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করার সক্ষমতা নেই।
তারা বলছেন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হলে এই পরীক্ষায় সচ্ছতা বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কেননা এর আগে অনেক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হলে এটি রোধ করতে কী করা হবে সেটিও অস্পস্ট। আমাদের দেশে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নেয়াই কষ্টসাধ্য; সেখানে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা আকাশ কুসুম কল্পনার মতই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। চিঠিতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কোনো বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। ফলে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি কেবলমাত্র আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের একজন সদস্য জানান, প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে। তবে সেটি আয়োজন করার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অনেকগুলো সমস্যা সামনে চলে এসেছে। সেই সমস্যাগুলোর সমাধান দেয়া আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ায় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। ফলে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হবে না বলেই মনে হচ্ছে। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাব মনে হয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিতির বাইরে পরীক্ষা নেয়ার বিকল্প কোনো নেই। ফিজিক্যাল প্রেজেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কম ঝুঁকিতে এই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত সফটওয়্যারটি যদি প্রাথমিক পরীক্ষায় উতরে যায়, তাহলে পরবর্তীতে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকগুলো সমস্যা সামনে এসেছে। আমরা সেটি নিয়ে আলোচনা করছি। আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সাথে উপাচার্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সমস্যার বিষয়গুলো তোলা হবে। সবকিছু বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এইচএসসির রেজাল্ট দিতে এখনো অনেক সময় আছে। আশা করছি এর মধ্যে আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।
প্রসঙ্গত, চলমান করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার। পরীক্ষার্থীদের বিগত জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে রেজাল্ট দেয়া হবে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।