বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » Default Category | সাক্ষাৎকার » মানুষের চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না - ডা: এম এ কাশেম, পরিচালক, সেন্ট্রাল হাসপাতাল
মানুষের চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না - ডা: এম এ কাশেম, পরিচালক, সেন্ট্রাল হাসপাতাল
চিকিৎসা সেবা ও তার গুণগত মান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি কিছু প্রাইভেট সেক্টর এগিয়ে এসেছে। তার সুষ্ঠু ধারা অব্যাহত রাখার জন্য দেশে বেশ কয়েকটি বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তন্মধ্যে সেন্ট্রাল হাসপাতাল উল্লেখযোগ্য। চিকিৎসা সেবাকে একটা মানদন্ড প্রদানের নিমিত্তে রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র ধানমন্ডির গ্রীণরোডে বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে অভূতপূর্ব সাফল্য ও খ্যাতি অর্জন করেছে। এটি অবস্থিত। শুরুতে পাঁচজন তাদের সীমাহীন পরিশ্রম ও প্রবল উদ্যোগের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে সেন্ট্রাল হাসপাতাল স্থাপন করেন। পরবর্তীতে কয়েকজন সমাজসেবক যারা নন-চিকিৎসক হওয়ার পরেও এই মহতী উদ্যোগকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য সামিল হন। সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. এম এ কাশেম সাহেবের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
শিক্ষাবিচিত্রা: সেন্ট্রাল হাসপাতাল প্রতিষ্টার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
ডা: এম এ কাশেম: নব্বই দশকে বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা ছিল। সরকারি পর্যায়ে যে হাসপাতাল ছিল তা মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য ছিল অপর্যাপ্ত ও নগন্য। যেগুলো ছিল তাতে পর্যাপ্ত শয্যা ছিল না, রোগীর তুলনায় চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল অতীব অসন্তোষজনক। প্রাইভেট ভাবেও ভাল কোন হাসপাতাল তখনো প্রতিষ্ঠিত হয় নি। আমি তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম। প্রতিনিয়ত ঢাকা মেডিকেলে রোগীদের অসুবিধাগুলো স্বচক্ষে দেখেছি, দেখেছি দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষের সুচিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া। তখন নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি থেকে অনুধাবন করি যদি প্রাইভেট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে বহু অসহায় রোগী মৃত্যুর আগে সুচিকিৎসা পাবে এবং চিকিৎসার অভাবে কেউ মারা যাবে না।
চিকিৎসা সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। এটা মানুষকে নিশ্চিত করা একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার কর্তব্য বলে মনে করি। সরকারিভাবে হোক আর বেসরকারিভাবে হোক মানুষ এই সেবা পাবার অধিকার রাখে। মানুষের চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। সবাইকে এই সেবা দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে জাতীয় অধ্যাপক ডা: এম আর খান এবং অধ্যাপক ডা: মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৮৫ সালে ধানমন্ডিতে শিশুদের জন্য বিশেষ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলাম যার নাম নিবেদিতা মেডিকেল সেন্টার। কিন্তু নিবেদিতা হাসপাতালে শুধু শিশুদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হত তাই সার্বজনীন চিকিৎসা সেবা প্রদান করার প্রয়োজন অনুভব করি। এর ধারাবাহিকতায় গ্রীণ রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতাল স্থাপন করি। একটি পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতালের ভবন যে ধরনের হওয়া উচিত সেভাবে স্থাপনা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছি। ১৯৯৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা এই হাসপাতালের উদ্ভোধন করেন এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা দেখে উনি ভূয়সী প্রশংসা ও সন্তোষ প্রকাশ করেন। যারাই এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন সবাই তাদের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং করেন। আমরা রোগীর সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে থাকি।
শিক্ষাবিচিত্রা: দরিদ্র এবং সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য আপনারা কি ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকেন?
ডা: এম এ কাশেম: আমরা সবসময় চিন্তা করেছি মানুষকে কীভাবে স্বল্প খরচে চিকিৎসা দেওয়া যায়। সে চিন্তা থেকে আমাদের হাসপাতালের সব কিছুর খরচ একটা সহনশীল পর্যায়ে রেখেছি। দরিদ্র এবং সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য আমরা একটি ট্রাস্ট করেছি যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুদান দিয়েছেন। আমরা হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের প্রতেক্যে এই ট্রাস্টে অনুদান দিয়ে থাকি। প্রতি বৎসরের যাকাতের একটি বড় অংশ আমরা সেখানে দান করি। প্রতিষ্ঠানের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রিরটাকা উক্ত ট্রাস্ট ফান্ডে জমা দেই। এ সমস্ত টাকা দিয়ে দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের এই ট্রাস্টকে একটা ভালো অবস্থানে দাঁড় করিয়েছি। এখানে দরিদ্র কাউকে বিনা চিকিৎসায় ফেরত যেতে হয় না। রোগীদেরকে প্রতি মাসে ৩০-৪০ লাখ টাকা আমরা ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকি।
শিক্ষাবিচিত্রা: সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা গুণগত মান সম্পর্কে বলবেন কি? যে কারণে জনসাধারণ চিকিৎসা সেবা নিতে এই হাসপাতালকে অগ্রাধিকার দিবে।
ডা:এম এ কাশেম: এখন পর্যন্ত যারা এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা সবাই তাদের সন্তুষ্টির কথা বলেছেন। এখান থেকে ভালো সার্ভিস পাননি এমন অভিযোগ আমরা পাইনি। আমরা হাসপাতালে বেডের খরচের সাথে খাবার সংযুক্ত করেছি যাখুবই মানসম্মত । আমাদের সাথে ৫জন উপ-পরিচালক কাজ করছেন যারা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম তদারকি করেন। ডাইরেক্টরও কাজ করছেন। খোঁজ রাখি কোন রোগী ভর্তি হওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে তার চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে কিনা। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা সেবা শুরু করার জন্য আমাদের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়ে থাকি। হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ রোগীর সুস্থ্যতার জন্য তার ফ্রেশনেস একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে থাকে। সেজন্য প্রতিটি কেবিনের বিছানার চাদর প্রতিদিন পরিবর্তন করা হয়। আমাদের এ হাসপাতালের বৈশিষ্ট্য হলো চিকিৎসক এবং নার্সরা স্ব-স্ব পেশায় দক্ষ এবং অন্তত আন্তরিক। একজন রোগী চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসলে সুষ্ঠু সেবা প্রদানের জন্য আমরা সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। সুষ্ঠুভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করতে হলে হাসপাতাল প্রশাসনকে একটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। তা হলো কমিউনিকেশন, রিলেশন, ইনফরমেশন এন্ড কমিটমেন্ট এই চারটি অনুসরণ করতে পারলে হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতি হবেই। আমরা এই বিষয় গুলোর উপর হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট এবং স্টাফদের প্রশিক্ষণ দেই। রোগী যা চায় তারা যেন সেটা পায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
শিক্ষাবিচিত্রা: হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আপনাদের বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কি?
ডা: এম এ কাশেম: সেন্ট্রাল হাসপাতালে সবসময় রোগী চাপ আছে। এখানে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী আমাদের জায়গা অপ্রতুল। সেজন্য হাসপাতালের পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। সরকারের কাছ থেকে পূর্বাঞ্চলে আমরা ৩.৫ বিঘা জমি বরাদ্দ পেয়েছি। সেখানে একটা বড় হাসপাতাল করার পরিকল্পনা রয়েছে। দরিদ্র এবং সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য কিছু বেড সেখানে ফ্রি রাখা হবে।
শিক্ষাবিচিত্রা: চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আপনারা কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হচ্ছেন কি?
ডা: এম এ কাশেম: প্রতিবন্ধকতাগুলো একটি হলো জায়গা স্বল্পতা। আমাদের এখানে প্রচুর রোগী আসে কিন্তু সবসময় আমরা সবাইকে জায়গা দিতে পারি না। আরেকটা প্রতিবন্ধকতা হলো, সম্প্রতি আমাদের দেশে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা হলো কোন রোগীর মৃত্যু হলে মানুষ অভিযোগ করে ডাক্তার মেরে ফেলেছে। এটা বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থার জন্য এক ধরনের হুমকি। প্রাইভেট সেক্টরের জন্যও হুমকি। আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে যদি এই সমস্ত ঘটনার বিলুপ্তি ঘটানো যায়। সেজন্য সরকারকে এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
কেউ যদি মনে করে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের অবহেলা আছে তবে সে বিএমডিসি তে অভিযোগ করুক, মামলা করুক। বিএমডিসি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় আছে সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে পারে কিন্তু মানুষ সেটা না করে হাসপাতাল ভাংচুর করে, ডাক্তারকে লাঞ্চিত করে। একটি সুস্থ্য সমাজে এগুলো মোটেই কাম্য নয়।
শিক্ষাবিচিত্রা: আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা: এম এ কাশেম: আপনাকেও ধ্যবাদ।