রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » Default Category | মেডিকেল কলেজ | সাক্ষাৎকার » উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিডিএসদের জন্য বেশি পোস্ট ক্রিয়েট করতে হবে - প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম, অধ্যক্ষ, ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিডিএসদের জন্য বেশি পোস্ট ক্রিয়েট করতে হবে - প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম, অধ্যক্ষ, ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ
ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ (ইউডিসি), ডেন্টাল এন্ড মেডিকেল কমিউনিটি সার্ভিসেস এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি প্রকল্প। ইউডিসি দন্ত চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবার একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। ইউডিসি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক অনুমোদিত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভুক্ত। এ প্রতিষ্ঠানের জন্ম ১৯৯৫ সালে। উচ্চ মেধা সম্পন্ন ও দক্ষ ফ্যাকাল্টি মেম্বার দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। কলেজের ট্রাস্টি এবং গভর্নিং বডির সদস্যগণ কলেজের দৈনন্দিন কার্যাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। যে কারণে প্রফেশনাল পরীক্ষায় ইউডিসি এর ফলাফল বরাবরই সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রতিবারই সেরা দশে ইউডিসি স্থান দখল করে নেয়। কলেজ ক্যাম্পাস ভবনেই রয়েছে ছাত্রী আবাসনের সুবিধা। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল। ইউডিসি-এর হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক জেনারেল বেড রয়েছে। গরিব রোগীদের জন্য ফ্রি কার্ড এর ব্যবস্থাসহ স্বল্প মূল্যে এবং নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রায় ১০০ জন শিক্ষক রয়েছেন ইউডিসি-তে। দেশি- বিদেশি জার্নালসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সমৃদ্ধ লাইব্রেরী রয়েছে। সম্প্রতি ইউডিসি-এর অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগমের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম ১৯৭৭ সালে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জন (বিডিএস) পাশ করে একই কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৮৪-১৯৯১ সাল পর্যন্ত ঢাকা পিজি (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) তে কাজ করেন। ১৯৯১ সালে ফুল স্কলারশীপ নিয়ে অট্রেলিয়ার কুইন্স ল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে গমন করেন। দেশে ফিরে এসে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৯ সনে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে বদলী হন এবং অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম ২০১১ সালে উপাধ্যক্ষ হিসেবে ইউডিসি-তে যোগদান করেন এবং বর্তমানে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষাবিচিত্রাঃ আপনার ডেন্টাল কলেজের বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম: ইউডিসি-তে বর্তমান ৫ বছর মেয়াদী বিডিএস কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। আগে বিডিএস শিক্ষার্থীদের চার বছরের কোর্স করতে হতো। এখন এক বছর বেশি করতে হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমান চার বছরের কোর্স শেষ করে এক বছর ইন্টার্নি করতে হচ্ছে। ফলে এখনকার বিডিএসদের দক্ষতা আরও বাড়ছে।
আমাদের ডেন্টাল কলেজে মোট ১০০টি আসন রয়েছে। প্রতি বছরই আমরা ১০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করি। এর মধ্যে কিছু আসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটান, ইরান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১০০ জন শিক্ষক এবং প্রায় ৪৫০ বিডিএস শিক্ষার্থী নিয়ে আমাদের কার্যক্রম চলছে।
শিক্ষাবিচিত্রাঃ দেশে ডেন্টাল চিকিৎসা বিকাশে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম: বেসিক কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য আমাদের দেশে ডেন্টাল চিকিৎসার কাক্সিক্ষত বিকাশ হচ্ছে না। ডেন্টাল চিকিৎসার বিকাশে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জনগণের সচেতনতার অভাব। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দন্ত চিকিৎসার সম্পর্কে সঠিক কোন ধারণা রাখেন না। দাঁতের যে চিকিৎসা করতে হয় বা চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা করছে না। এতে করে চিকিৎসকরা যেমন চিকিৎসা সেবা দেয়ার সুুযোগ পাচ্ছে না তেমনি ডেন্টাল চিকিৎসার উৎকর্ষতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
শিক্ষাবিচিত্রাঃ আমাদের দেশে ডেন্টাল চিকিৎসা বিকাশে সরকারি ও বেসরকারি কি ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন?
প্রফেসর ডা. হোসনে আরা: উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিডিএসদের জন্য বেশি পোস্ট ক্রিয়েট করতে হবে। এভাবে ডেন্টাল চিকিৎসা মফস্বল পর্যায়ে চলে যাবে এবং সেটা সহজ হবে। বর্তমানে ডেন্টাল চিকিৎসা মূলত: শহরকেন্দ্রিক। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে পোস্ট ক্রিয়েট করতে পারলে গ্রামের জনসাধারণ ডেন্টাল চিকিৎসা নিতে উৎসাহী বা কৌতুহলী হবে। ফলশ্রুতিতে বিডিএসদের দক্ষতার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজন বাড়বে। তাতে করে শিক্ষার্থীরা বিডিএস-এ পড়াশুনা করার অনুপ্রেরণা পাবে। সর্বোপরি পুরো ডেন্টাল চিকিৎসার বিকাশ হবে।
শিক্ষাবিচিত্রাঃ অনেকের মতে, আমাদের দেশে দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম: আমাদের দেশে দক্ষ শিক্ষকের অভাবের অন্যতম কারণ হচ্ছে এদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ কম। চাহিদার তুলনায় শিক্ষাবৃত্তি অপ্রতুল এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট করার সুযোগ নেই। আমাদের দেশে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা বিদেশে গিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট করতে পারছে না। একদিকে দেশে এই সুযোগ নেই অন্যদিকে বিদেশে ব্যয়বহুল। যাদের সামর্থ্য আছে তারা বাইরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে। যারা দরিদ্র কিন্তু মেধাবী তারা সেই সুুযোগ পাচ্ছে না। তবে সরকারি উদ্যোগে এদেশের শিক্ষকদের জন্য দেশের বাইরে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করলে পারলে তাদের দক্ষতা বাড়বে।
শিক্ষাবিচিত্রাঃ কলেজের সার্বিক উন্নয়নে আপনার কোন বিশেষ পরিকল্পনা থাকলে তা জানালে খুশী হব?
প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম: ভবিষতে আমরা পোস্ট গ্রাজুয়েট শুরু করার ব্যাপারে পরিকল্পনা নিচ্ছি। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে। অর্থাৎ পোস্ট গ্রাজুয়েট করার জন্য প্রয়োজনীয় যা কিছু প্রয়োজন সেটার সুবিধা রেখে ক্যাম্পাসের পরিধি বাড়ানোর একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে।
শিক্ষাবিচিত্রা: আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রফেসর ডা. হোসনে আরা বেগম: আপনাকেও ধন্যবাদ।