রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » Default Category | বিশ্ববিদ্যালয় | সাক্ষাৎকার » চাকরির বাজারে আমাদের শিক্ষার্থীরা শীর্ষে অবস্থান করছে - প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক, চেয়ারম্যান, ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি
চাকরির বাজারে আমাদের শিক্ষার্থীরা শীর্ষে অবস্থান করছে - প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক, চেয়ারম্যান, ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছে ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি। ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির জন্মই হয় কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়ে। সম্প্রতি শিক্ষাবিচিত্রাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজের গভর্নিং বর্ডির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক। প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিজ্ঞানী এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ২০০১ এবং ২০১৬ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ড. শাহিদা রফিক আইএসটি-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং আইএসটি-র ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি পিএটিসি-র উপদেষ্টা বোর্ডের প্রথম মহিলা সদস্য এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাচিত প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট। ড. শাহিদা রফিক ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে বিএসসি অর্নাস এবং ১৯৭৩ সালে সেলিড স্টেট ফিজিক্সে এমএসসি অর্জন করেন। এছাড়া ১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে পিএইচডি এবং ১৯৮৫ সালে জাপানের কিয়োটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেমিকন্ডাটারস এর উপর পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। ইন্টারন্যাশনাল বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার তাকে ওয়ান থাউজেন্ড গ্রেট এশিয়ান এর সদস্য করেন। বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি সরকারি, বে-সরকারি এবং জাতীয় পর্যায়ে বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে মহিলা বিজ্ঞানী সমিতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষাবিচিত্রা : আপনার প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি?
প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক : ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির অন্যাতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪ বছর মেয়াদী ৩টি প্রফেশনাল বিষয় রয়েছে। আই এস টি এর দর্শন হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয় শিক্ষা দেওয়া। সেজন্য ১৯৯৩ সালে আইএসটি-র জন্মই হয় কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়ে। এখানে উল্লেযোগ্য যে, আমরা প্রচুর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী পাই। অর্থাৎ প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীই পড়াশুনায় খুব ভালো কারণ যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে কিংবা বুয়েটে ভর্তি হতে পারে না তারাই আমাদের এখানে ভর্তি হয়। আইএসটি-র আরেকটি উল্লখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো আমরা নিজেরাই অ্যাডওর্য়াড দেই। ভবিষ্যতে ডিগ্রী দেওয়ার চেষ্টায় আছি। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী দিচ্ছে কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
শিক্ষাবিচিত্রা : আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুনগত মান সম্পর্কে কিছু বলুন?
প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক : প্রতিষ্ঠানের গুনগতমান তো ছাত্ররা বলবে। গুনগত মান বিচার করলে ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি সব সময় টপে রয়েছে। আমাদের গুনগত মান, আমি বলব ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় এবং বুয়েটের সমকক্ষ পর্যায়ে। আগেই বলেছি যে, উক্ত দুটি বিদ্যাপীঠের কারিকুলামে আমাদের পাঠ্যক্রম চলছে। এর বাস্তব প্রমাণ আমাদের ছাত্ররা সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ পাচ্ছে। চাকরির বাজারে আমাদের শিক্ষার্থীরা শীর্ষে অবস্থান করছে। এমন কোন মন্ত্রণালয়, বহুজাতিক কোম্পানী নেই যেখানে আমাদের ছাত্ররাই নেই। চাকরির শীর্ষ স্বরণীয় পদ গুলোতে আমাদের ছাত্রদেরই অবস্থান।
শিক্ষাবিচিত্রা : এখানে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারকে কিভাবে উৎসাহিত করা হয় এবং কি ধরনের সুবিধা রয়েছে।
প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক : বর্তমান যে সময় চলছে তাতে তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া অচল। ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বরাবর প্রযুক্তি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যে আন্দোলন শুরু হয়েছে আইএসটি অনেক আগে থেকেই এই আন্দোলন শুরু করেছে। চলমান সময়ে সম্পক্তি থাকলেই কিন্তু ধনী হওয়া যায় না বা তাকে ধনী বলা যায় না। কার কয়টা গরু আছে, কয়টা দালান আছে কতটুকু সম্পত্তি রয়েছে এ সমস্থ দিয়ে এখন ধনীর বিচার করা হয় না। এখন সেই ধনী যার মধ্যে যত বেশী তথ্য রয়েছে। এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই আমরা ছাত্রদের ধনী করে তুলছি। আইএসটি অবাধ তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা নিশ্চিত করেছে। আমাদের যে ৪/৫ টি ল্যাব রয়েছে প্রতিটি ল্যাবেই ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া আছে। আমাদের লাইব্রেরীটাও অনলাইন ভিত্তিক ।
শিক্ষাবিচিত্রা : আমাদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা শেষে অনিশ্চিত জব মার্কেট সম্পর্কে হতাশাগ্রস্ততা লক্ষ্য করা যায়। এ প্রসঙ্গে আপনার পরামর্শ কি?
প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক : আমাদের ছাত্রদের অভিভাবকদের কোন প্রকার হতাশা নেই। কিছু মানবিক বিভাগের কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো নিয়ে পড়াশুনা করলে জব মার্কেট ধরা দূরহ হয়ে উঠে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা আমাদের ছাত্রদের মোকাবিলা করতে হয় না। আমাদের ছাত্রদের তৃতীয় চতুর্থ বর্ষে পড়াশুনা করার সময়ই চাকরি হয়ে যায়। অভিভাবকগন নয়, আমরাই একটু হতাশ হই। কারণ আমরা চাই ছাত্ররা পুরো কোর্সটি সম্পূর্ণরুপে শেষ করুক। কিন্তু কোর্স শেষ হওয়ার আগেই তাদের চাকরি হয়ে যায়। বহুজাতিক কোম্পানি গুলো আগেই তাদের নিয়ে নিচ্ছে। এখানে মজার বিষয় হলো আমরা ছাত্ররা চাকরি করে না, চাকরি দেয়, তারা উদ্যোক্তা হয়ে আইটি প্রতিষ্ঠান খুলছে এবং সেখানে তারা কর্মসংস্থান ঘটাচ্ছে।
শিক্ষাবিচিত্রা : শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ বাড়ানোর লক্ষ্যে নানামূখী উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে অনেক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মনে করেন। আপনার বক্তব্য জানতে চাচ্ছি?
প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক : নৈতিক শিক্ষাটাই তো আসল শিক্ষা। একজন ছাত্রের যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য মার্জিত আচরণ, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, মানুষকে সম্মান করা এগুলোই নৈতিক শিক্ষা। এই শিক্ষাই এক নম্বর শিক্ষা। দার্শনিকগণ তো বলছেন, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো মানবিকতা অর্জন, নিজেকে চেনা, পরম সত্যকে জানা। জগত সৃষ্টির পেছনে যে ওয়ান প্রোগ্রামার আছেন তাকে জানা।