রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » বিশ্ববিদ্যালয় | শিক্ষা | শিক্ষাঙ্গন » প্রাক্তনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নেই ঢাবির— হাইকোর্টের রায়
প্রাক্তনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নেই ঢাবির— হাইকোর্টের রায়
তিন বছর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক ছাত্রের সঙ্গে অনভিপ্রেত ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাডেমিক সনদপত্র বাতিল করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের ছাত্র আবু তালহার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে সংগঠিত এ ঘটনা পরবর্তীতে মিমাংসা হয়ে গেলে এক বছর আগে হল প্রশাসন তার সনদপত্র ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতে সাড়া না দিলে আদালতের দারস্থ হয় ঢাবির সাবেক ছাত্র আবু তালহা।
তালহার করা এক রিটের রায়ে সম্প্রতি হাইকোর্ট জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের যেকোন ধরনের অপরাধে শাস্তি প্রদানের কোন ক্ষমতা নেই ঢাবি কর্তৃপক্ষের। একইসঙ্গে আবু তালহার সদনপত্রের ব্যাপারে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডারকে এখতিয়ার বহির্ভূত বলে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালতের এই রায়ের পর সম্প্রতি সিন্ডিকেটের এক সভায় তার সনদপত্র ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে ঢাবির সাবেক এ ছাত্র তার সনদপত্র পেতে আর কোন বাঁধা রইল না।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর রাতে আবু তালহার ছোট ভাই আবু তাহের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। এসএম হলের ডায়নিং রুমে একই হলের ওমর ফারুক নামে আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানার পর তালহা সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন।
পরবর্তীতে অনভিপ্রেত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষ রাজধানীর শাহবাগ ও তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মারামারির এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের মিটিংয়ে তালহার সনদপত্র বাতিলের সুপারিশ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি তার সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা যায়, আবু তালহা ও ওমর ফারুকের মাঝে ঘটনার মিমাংসা হয়ে গেলে গত বছরের ১ আগস্ট আবু তালহার শাস্তি মওকুফের জন্য সুপারিশ করেন তৎকালীন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দ্দার ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সাব্বির আহমদ। কিন্তু ওই সুপারিশ গ্রহণ করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
এদিকে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হওয়াতে সনদপত্র ফেরত না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন আবু তালহা। পরবর্তীতে কোন ওপায় না দেখে তিনি আদালতে আশ্রয় নেন। ঢাবির সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন তিনি।
এর প্রেক্ষিতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লার বেঞ্চ এক রায় দেয়। ওই রায়ে বলা হয়, ঢাবির ৭৩-এর অধ্যাদেশ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার পার্ট-২ পর্যালোচনা করেও সাবেক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিধান পাওয়া যায়নি। ঢাবির ৭৩-এর অধ্যাদেশ, আইন এবং ঢাবি ক্যালেন্ডার পার্ট-২ এর বিধানগুলি বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই ঢাবি কর্তৃপক্ষের শুধুমাত্র বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
হাইকোর্টে দায়ের করা পিটিশনের রায়ের পর গত ২৯ নভেম্বর ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় আবু তালহার সনদপত্র ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে তার সনদপত্র পেতে আর কোন বাঁধা রইল না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে ২০১৩ সালের স্নাতক ও ২০১৪ সালের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তালহা।
এ বিষয়ে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী আবু তালহা বলেন, হাইকোর্ট থেকে এ ধরনের একটি নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে। ওখানে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। তারা সবোর্চ্চ ক্রিমিনাল মামলা করতে পারবে।
আবু তালহার পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট জামিলুর রহমান খান বলেন, ওই ছাত্রের হলে অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি ক্রিমিনাল মামলা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটা থেকে সে খালাস পেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সনদপত্র বাতিল থেকে সরে আসেনি। পরবর্তীতে রিট করলে দীর্ঘদিন শুনানির পর হাইকোর্ট ডিভিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদপত্র পেতে তার আইনগত আর কোন বাঁধা নেই।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রেজুলেশন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সাবেক ছাত্রের বিরুদ্ধে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। তবে ছাত্রত্ব থাকলে নেয়া সম্ভব হত। পরে আমরা বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এম লিটন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে চ্যালেঞ্জ করে ওই শিক্ষার্থী রিট করছে। এতে সে জিতে গেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় হেরে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না বলে মত এই আইনজীবীর।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা চাই আইনের শাসন। আইন যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেই বিষয়ের উপর আমরা সন্তুষ্ট! বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধান্ত এবং হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানান উপাচার্য।