শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » বিশ্ববিদ্যালয় » এনএসইউ’তে “বাংলাদেশের নারীদের উপর কোভিড-১৯ মহামারি এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব” শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
এনএসইউ’তে “বাংলাদেশের নারীদের উপর কোভিড-১৯ মহামারি এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব” শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) স্কুল অব বিজনেস এন্ড ইকোনমিক্স এর অর্থনীতি বিভাগ এর আয়োজনে আজ শনিবার (১২ ডিসেম্বর) “বাংলাদেশের নারীদের উপর কোভিড-১৯ মহামারি এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব” শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারটি সকাল ১১ টায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয় এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগ এর সহকারী অধ্যাপক ড. কান্তি অনন্ত নুজহাত এর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই এর প্রাক্তন সভাপতি, সাউথ ইস্ট ব্যাংক এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টিবোর্ড এর চেয়ারম্যান জনাব এম. এ. কাসেম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড এর সদস্য মিজরেহানা রহমান এবং মিজ ইয়াসমিন কামাল। বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) –এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষক ও বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, ঢাকা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, ব্র্যাকের প্রিভেন্টিং ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যান ইনিশিয়েটিভের পরিচালক মিজ নবনীতা চৌধুরী এবং লেখক মিজ ফারিহা পন্নী।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ড এর চেয়ারম্যান, জনাব এম. এ. কাসেম বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাব বর্তমানে শুধুস্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর বিরূপ প্রভাব দেশের অর্থনেতিক, সামাজিক ক্ষেত্রগুলোতেও অনুভূত হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষনায় মন্দার পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিবেচনা করলে এই মন্দার প্রকোপতা বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য। জাতিসংঘের গবেষনায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে নারীদের কাজের পরিধিতিতে নতুন দায়িত্ব সংযোজিত হয়েছে, যাকে বিনা বেতনে সেবা বলা হচ্ছে, যদিও একজন পুরুষের চেয়ে একজন নারীকে তিনগুন বেশি সময় দিতে হয়। এই মন্দার প্রভাবের তীব্রতার শিকার হচ্ছে প্রান্তিক দারিদ্র সীমায় থাকা নারীরা। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক খাত ছাড়াও অর্থনীতিতে যে যে সকল খাতে নারীর অংশগ্রহন বেশি, যেমন কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তা এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের নারীকর্মীদের ওপর এর প্রভাব বিভিন্ন মাত্রিকতায় ছড়িয়ে পড়েছে। এফবিসিসিআইয়ের একজন প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসেবে আমি জানি সঠিক কর্মসংস্থানের কোন বিকল্প নেই। একই সাথে নারীদের কর্মক্ষেত্রের কাজ ও ঘরের কাজের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা ও অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মহামারি চলাকালীন সময়ে অনেক নারীরা যারা আনুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছিলেন তারা তাদের কাজ হারিয়েছে, নারীদের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বেড়ে গিয়েছে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তারা কোভিড মহামারীর কারণে পুঁজি হারিয়েছে, যার ফলে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান চালাতে পারছে না এবং কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। এ সকল সমস্যা নিরসনে সরকারের নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
মিজ নবনীতা চৌধুরী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীরা অনেক পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যবহারকারীদের পরিসংখ্যান করলে দেখা যায় নারী ব্যবহারকারীদের সংখ্যা অর্ধেকের চেয়েও অনেক কম। আবার আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে একটি পরিবারে একজন নারী মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে কিনা সেই সিদ্ধান্তও একজন পুরুষ নিচ্ছে। এখন করোনার সময়ে হটলাইন নাম্বার এর ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে কেউ নির্যাতিত না হয় কিন্তু নারীদের কাছে যদি মোবাইল না থাকে তাহলে তারা কিভাবে সাহায্যের জন্য আবেদন করবে। তিনি আরও বলেন করোনার কারনে যে সব নারী চাকরি হারিয়ে বাসাই আছেন তারা বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কোভিড মহামারীর কারণে একলাখেরও বেশি গার্মেন্টস নারী কর্মী তাদের কাজ হারিয়েছে। নারী শ্রমিকরা যে পরিবেশে বাস করেন সেটা অত্যন্ত মানবেতর, এজন্য তাদের নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এসকল সমস্যা নিরসনে নারীদের কাজের পরিবেশের উন্নয়ন এবং চাকুরীর নিরাপত্তা প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাজ করতে হবে।
ওয়েবিনারে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দসহ আরও অনেকে।