শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » » চাকরি পাবে না মাদকসেবীরা
চাকরি পাবে না মাদকসেবীরা
মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে অ্যাকশন প্ল্যান নিয়েছে সরকার। অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী অদূর ভবিষ্যতে কোনো মাদকসেবী সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তিতেও মাদকাসক্তদের অযোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাদকসেবীদেরও তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলা পর্যায় থেকে এই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য গঠিত মেডিকেল ফিটনেস পরীক্ষায় ডোপ টেস্ট বা মাদকাসক্তির পরীক্ষা চালু করা হচ্ছে। ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও পর্যায়ক্রমে ডোপ টেস্ট করা হবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে শুধু সরকারি কিছু চাকরির নিয়োগে মেডিকেল ফিটনেস পরীক্ষায় ডোপ টেস্ট চালু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে অন্য সব নিয়োগ পরীক্ষায় এই ডোপ টেস্ট চালু করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে মাদকবিরোধী অ্যাকশন প্ল্যান অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। ওই পরিকল্পনায় বেশ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। এতে রয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি হিসেবে রূপান্তর। টেকনাফের নাফ নদসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো, ড্রাগ ডিটেক্টর ও স্ক্যানার মেশিনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার। ইতিমধ্যে চার বিভাগীয় শহর রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ২০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এসব ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে অনেক কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে জনবল বাড়িয়ে ১ হাজার সাতটি পদ সৃজন করে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চারটি বিভাগীয় শহরে রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের জন্য জমি কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তারা জানান, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে মাদক ব্যবসার কৌশল। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন মাদকবিরোধী সর্বাত্মক সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও সব বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা।
অ্যাকশন প্ল্যানে কী আছে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী জানান, তিন ধাপে অর্থাৎ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ চলছে। প্রথমত, এক বছরের জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা, দ্বিতীয়ত, দুই বছরের জন্য মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পাঁচ বছরের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সামনে রেখে কাজ চলছে। জানা গেছে, পরিকল্পনার মধ্যে আছে, সীমান্ত পথে মাদকের প্রবেশ রোধে কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে নৌপথে নাফ নদে বাংলাদেশের মাছ ধরার নৌকাগুলোকে ভিন্ন রং করা। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সীমান্ত নদী ও উপকূলীয় এলাকার জলযানকে লাইসেন্সের আওতায় আনা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির নেতৃত্বে সীমান্তে যৌথ চেকপোস্ট বসিয়ে নজরদারি বাড়ানো, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ড অন্যান্য স্থানে পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো। এ ছাড়া জেলা ও মহানগর এলাকাভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে। পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ডিএনসি ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পৃথক তালিকা তৈরি করা হবে। কমপক্ষে তিনটি তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের ‘এ’ ক্যাটাগরি, দুটি তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের ‘বি’ ক্যাটাগরি ও অন্যদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তিন মাস পর পর হালনাগাদ করে সুরক্ষা সেবা বিভাগে সংরক্ষণ করা হবে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আন্তবাহিনী সমন্বয় সভা করে নতুন তালিকা ধরে একযোগে জেলা ও উপজেলায় টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হবে।