রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » Default Category | শিক্ষাঙ্গন » উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে রাবিতে খালিপায়ে পদযাত্রা
উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে রাবিতে খালিপায়ে পদযাত্রা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার অপসারণ দাবিতে ক্যাম্পাসে খালিপায়ে পদযাত্রা ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
আজ ০৪ অক্টোবর (শুক্রবার) বিকেল ৫টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলা কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ এই দুই কর্তাব্যক্তির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
জানা গেছে, রাবির এই দুই কর্তাব্যক্তির অপসারণ দাবিতে আজ বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে খোলা পায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পদযাত্রা কর্মসূচিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে প্রায় ১০ মিনিট অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে সমাবেশ করেন তারা।
ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত আলী মিলনের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন রাখেন- রাকসু আন্দোলন সঞ্চের মুখপাত্র আব্দুল মজিদ অন্তর, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মাসুদ মন্নাফ, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রাশেদ রিপন প্রমুখ।
সমাবেশে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সঞ্চের মুখপাত্র আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘বর্তমান দুর্নীতি ভিসি-প্রোভিসি তাদের চেয়ারে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তাই দ্রুত তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। সেই সঙ্গে যতদিন পর্যন্ত তারা তাদের পদ থেকে সরে না যাবে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’ এসম তিনি আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ শেষ করেন।
এদিকে উপাচার্য নিজের অপকর্ম থেকে জনদৃষ্টি সরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ‘জয় হিন্দ’ বলেছেন বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫৮ জন শিক্ষক। আর চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁসের পর উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার নিয়োগ বাণিজ্য জড়িত উল্লেখ করে তাদের দুজনের পদত্যাগ দাবি করেছেন শিক্ষকরা।
আজ ০৪ অক্টোবর (শুক্রবার) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের সদস্যদের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার দুটি পৃথক দুষ্কর্ম গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের সদস্য এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়-জনতাদের মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের সদস্যদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তব্য শেষে উপাচার্য ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” এবং জয় হিন্দ’ বলে বক্তব্য শেষ করেন। এটি একটি পরিকল্পিত নকশা, যা তিনি তার দুর্নীতি ও অপকর্ম থেকে জনদৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
উপাচার্যের ‘জয় হিন্দ’ বলার পক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর ইতিমধ্যে ইতোমধ্যে যে ধূর্ত ব্যাখ্যা গণমাধ্যমে হাজির করেছে, তাতে প্রশাসনের দূরভিসন্ধি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহায়তা দানকারী প্রতিবেশী ভারতের রাজনৈতিক এবং সামরিক স্লোগান ‘জয় হিন্দ’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কর্তৃক উচ্চারণ বাংলাদেশের রাষ্ট্র সত্ত্বার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উপ-উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের কথা তুলে ধরে ওই শিক্ষকরা বিবৃতিতে বলেন, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, তিনি নিয়োগ বাণিজ্যে নিমজ্জিত। বিষয়টি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের যে জনরব চালু আছে, এই ফোনালাপ তারই সত্যতা প্রমাণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বিবেকহীন এ সমস্ত কর্মকাণ্ডে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের মানবিকতাহীন ও নৈতিকতা বর্জিত এসব অপকর্মের প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের সদস্যগণ দুর্নীতিবাজ, অসৎ এবং নিয়োগ বাণিজ্যে নিবেদিত প্রশাসকদের অপসারণ দাবি করছে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুরুল হক, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুননবী সামাদী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম. নজরুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম. খলিলুর রহমান খানসহ বিভিন্ন বিভাগের ৫৮ জন শিক্ষক।
উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ইতিহাস বিভাগ ও জন ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র আয়োজিত তিন দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার পর ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়েছিলেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এছাড়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রভাষক পদে এক চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রীর সঙ্গে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার ফাঁস হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।