রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » শিক্ষা » চূড়ান্ত হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা
চূড়ান্ত হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এরইমধ্যে নীতিমালা কিছুটা পরিমার্জন করে মতামত চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, শিক্ষকের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়ে সবার মতামত নিয়েই নীতিমালাটি চূড়ান্ত হবে বলে তারা আশা করছেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রায় চূড়ান্ত করা খসড়াটি ওয়েবসাইটে দিয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মতামত চেয়েছে ইউজিসি।
শিক্ষক নিয়োগের সাধারণ নিয়মাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রভাষক হওয়ার জন্য লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করে একটি শর্টলিস্ট তৈরি করে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
শর্তে বলা হয়েছে, এএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর মধ্যে ন্যূনতম জিপিএ-৪.৫০ থাকতে হবে। কলা অনুষদভুক্ত চারুকলা, সঙ্গীত ও নাট্যকলা বিষয়সমূহে প্রভাষক নিয়ায়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান উভয় পরীক্ষায় যৌথভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৭ থাকতে হবে। তবে কোনো পর্যায়ে জিপিএ-৩ এর কম থাকতে পারবে না।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারি বা সমমান পরীক্ষায় পাসকৃত আবেদনকারীকে এসএসসি বা সমমান এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বা সমমান উভয় পরীক্ষায় সর্বমোট জিপিএ-৯ এর মধ্যে ন্যূনতম জিপিএ-৮ থাকতে হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়।
আবেদনকালে প্রার্থীকে অবশ্যই ডিগ্রিপ্রাপ্ত হতে হবে অর্থাৎ পরীক্ষার ফলপ্রকাশ অপেক্ষমান থাকাকালীন আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। অনলাইন ও দূরশিক্ষণের মাধ্যমে ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রার্থীদের কোনো বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা যাবে না।
সক্রিয় শিক্ষকতা বলতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান অথবা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত পূর্ণবেতনে শিক্ষাছুটির সময়কালকে বোঝাবে যদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক অর্জিত ডিগ্রি সম্পন্ন করে কাজে যোগদান করেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সক্রিয় শিক্ষকতার চাকরিকাল হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানের চাকরির অর্ধেক সময়কাল বিবেচনা করা যেতে পারে।
শিক্ষাছুটি নিয়ে কোনো শিক্ষক পোস্ট-ডক্টরল ফেলোশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করলে সর্বোচ্চ দুই বছর সক্রিয় শিক্ষাকাল হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এ সুযোগ কেবলমাত্র একবার গ্রহণ করতে পারবেন। তবে এর আগে প্রদেয় বন্ড পিরিয়ড অতিক্রান্ত হওয়ার পর পোস্ট-ডক্টরল ফেলোশিপ প্রোগ্রামে যেতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষাছুটি বলতে ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে মঞ্জুরকৃত পূর্ণবেতনে ছুটিকে বোঝাবে। এ দু’টি মাস্টার্স ও পিএইচডিসহ সর্বমোট পাঁচ বছর হবে। তবে শুধুমাত্র পিএইচডি ডিগ্রির জন্য সর্বোচ্চ চার বছর শিক্ষাছুটি পাওয়া যাবে। বিনা বেতনে বা লিয়েনে বা এক্সট্রাঅর্ডিনারি ছুটিকে সক্রিয় শিক্ষাকাল বলে বিবেচিত হবে না।
নীতিমালা অনুযায়ী, আর্কিটেকচার, চারুকলা, নাট্যকলা, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ, সঙ্গীত, নৃত্য, ফিলা অ্যান্ড মিডিয়াসংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান আয়োজিত প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী ও পরিবেশনায় অংশগ্রহণপূর্বক প্রযোজনা, উপস্থাপনা ও রচনার জন্য অর্জিত পুরস্কার বা ক্যাটালগ বা সাটিফিকেট মূল্যায়ন সাপেক্ষে প্রকাশনা হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকরা বর্তমানে যে পদে কর্মরত আছেন, শুধুমাত্র ওই পদের পরবর্তী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে কর্মরত শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিথিল করা যাবে (এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পর্যন্ত)।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্তদের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে এ নির্দেশিকা প্রজ্ঞাপিত হওয়ার তারিখ থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রভাষক পদে নিয়োগ করা যাবে। তবে দুই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার অব্যবহিত পরে নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রভাষক নিয়োগ করতে হবে।
শিক্ষক নিয়োগের কোনো ধাপে নিয়মিত পদ সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হলে আপগ্রেডেশন করা যাবে। যেহেতু গ্রেড-২ ও গ্রেড-১ পদোন্নতি হিসেবে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিবেচিত সেহেতু গ্রেড-২ ও গ্রেড-১ অধ্যাপক পদে লেটারাল বা সরাসরি নিয়োগ গ্রহণযোগ্য হবে না।
অতিথি শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়, ইউজিসির অনুমতিক্রমে দেশি-বিদেশি প্রতিথযশা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চুক্তিভিত্তিতে ডিসটিংগুয়েসড প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন। বিশেষায়িত বিষয়ের ক্ষেত্রে ইউজিসির অনুমতিক্রমে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে শিক্ষকতার বিভিন্ন ধাপে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ করা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতাকে সক্রিয় শিক্ষাকাল হিসেবে গণ্য করে কোনো পদের জন্য প্রয়োজনীয় চাকরির সময়কাল বা প্রকাশনার সংখ্যা কমানো যাবে না।
এদিকে, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণে গড়ে ওঠা শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি টিচার্স ফোরাম এক বিবৃতিতে নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানিয়েছে, প্রস্তাবিত অভিন্ন নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী। অভিন্ন নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানরক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি কালাকানুন হতে যাচ্ছে বলে তাদের আশঙ্কা।
তাদের দাবি, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষকদের মান ও সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পদে শিক্ষক নিয়োগের শর্ত ঠিক করবে। অভিন্ন নীতিমালা না করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী বাস্তব নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। শিক্ষকদের মানমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান তাদের।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক শিবলী রুবায়েতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সাবাই মিলে চাপ সৃষ্টি করায় নতুনভাবে খসড়া দেওয়া হয়েছে। কারো যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেদিক বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালা তৈরি করবে বলে আমরা আশাবাদী।
‘তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার জন্য ন্যূনতম মান ঠিক করে দেওয়া উচিত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিচে নেমে যাচ্ছে।’
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সভা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেই সভায় সবাই মতামত দেবেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি থেকে নীতিমালায় মতামত দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছে। তাদের মতামত নিয়ে নিশ্চয়ই চূড়ান্ত হবে।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, সবার মতামত দেওয়ার পরই চূড়ান্ত হবে নীতিমালা। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।