পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায়
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারাদিন ব্যস্ত কিংবা মোবাইলে গেমস খেলা, মুভি দেখার সময় ঘুম না আসলেও বই নিয়ে বসলেই হঠাৎ চলে আসে ঘুম। এই সমস্যা প্রায় সবারই।
একটা গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭০% ছেলে মেয়ের এই একই সমস্যা হয়ে থাকে। হয়ত অনেক সময় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েও পড়তে বসেন, আজ রাতে না ঘুমিয়ে সারা রাত বই পড়বেন। শেষ পর্যন্ত সেটা আর সফল হয়ে উঠে না।
মনে হয় রাজ্যের ক্লান্তি যেন এসে ভর করেছে শরীরে। এখন ঘুমের চেয়ে জরুরি আর কিছুই হতে পারে না আপনার জন্য। এভাবেই সারাদিন মানসিক প্রস্তুতি ও পূর্ব-পরিকল্পনা সত্ত্বেও, খুব বেশিক্ষণ পড়া সম্ভব হলো না আপনার।
পড়তে বসে যাতে ঘুম না আসে, তা নিশ্চিত করার বেশ কিছু কার্যকরী উপায় আছে। চলুন, জেনে নিই কী সেই উপায়।
পড়ার ঘরকে আলোকিত রাখুন: আপনি যখন কেবল টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়বেন, তখন ঘরের বেশিরভাগ অংশই অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে, যা একটি আরামদায়ক পরিবেশের জন্ম দেবে, এবং আপনার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করবে বিশ্রাম গ্রহণের জন্য। এজন্য পড়ার সময় প্রয়োজনের বাইরেও পুরো ঘর আলোকিত করে রাখা জরুরি।
দাড়িয়ে দাড়িয়ে পড়ুন: পড়তে বসলে ঠিক যে সময় আপনার ঘুম পায় তখন দাড়িয়ে দাড়িয়ে পড়তে থাকুন। দাড়িয়ে পড়লে ঘুম আপনার কাছেও ভিড়তে পারবে না। তবে হাটতে হাটতে পড়বেন না। তাহলে ঘুম আসবে না ঠিকই কিন্তু মনযোগ হাটার মধ্যে চলে যাবে। তাই চেষ্টা করুন দাড়িয়ে পড়ার। কিন্তু সব সময় দাড়িয়ে পড়ার দরকার নেই। শুধু পড়তে বসে যখন ঘুম পায় তখন দাড়িয়ে পড়ুন।
চেয়ারে বসে পড়ুন: পড়াশোনা সামান্য কিছু সময়ের কাজ নয়, অনেক ক্ষেত্রে আপনাকে ঘন্টার পর ঘন্টাও পড়তে হতে পারে। তাই আপনার উচিৎ পেছনে হেলান দেয়া যায় এমন একটি চেয়ারে বসে, সামনের টেবিলে বই রেখে পড়া, যা আপনাকে সবসময় সতর্ক রাখবে, আপনার মনোযোগ বিঘ্নিত হতে দেবে না।
ভারি খাবার বর্জন করুন: আপনি যখন পুরোপুরি পেট ভরে খাওয়া সম্পন্ন করেন, তখন আপনার মনে খানিকটা আয়েশ করে নেয়ার সাধ জাগে। অপরদিকে পেট যদি পুরোপুরি ভরা না থাকে, তাহলে শরীরের এই বাড়তি আয়েশের আকাঙ্ক্ষাও সৃষ্টি হয় না।
প্রচুর পানি পান করুন: প্রচুর পানি পানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও এটি সমান দরকারি। নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা থাকবে না। ঘুমিয়ে পড়লেও, মূত্রবেগের অস্বস্তিতে দ্রুতই ঘুম ভেঙে যাবে।
তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান, তাড়াতাড়ি উঠুন: আপনি যদি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান, তাহলে আপনার যথেষ্ট পরিমাণ ঘুম হবে। ফলে পরদিন সকালে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে তরতাজা হয়ে উঠতে পারবেন। হঠাৎ হঠাৎ ক্লান্তি জেঁকে বসবে না, আর ঘুম ভালো হওয়ায় আপনি হুট করে বিরক্ত বা বিষাদগ্রস্তও হবেন না।
জোরে জোরে পড়ুন: জোরে জোরে পড়ার মাধ্যমেই ঘুমিয়ে পড়ার আশঙ্কা দূর করা যায়। আবার জোরে জোরে পড়া মানে হলো নিজের কন্ঠস্বর নিজের কানে শোনা। এটা অনেকটা ক্লাসে শিক্ষকের পড়া বুঝিয়ে দেয়ার মতো ব্যাপার। আপনি নিজেই নিজেকে পড়া বুঝিয়ে দেবেন, ফলে অনেক জটিল বিষয়ও দ্রুতই আপনার বোধগম্য হবে।
পড়া বিষয় লিখে ফেলুন: পড়া বিষয়টা খাতায় যখন নিজের মতো করে শর্ট নোট আকারে লিখবেন, তখন সেটি আপনার পক্ষে মনে রাখা আরো সহজ হয়ে যাবে। আর বলাই বাহুল্য, পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাওয়ার যে সম্ভাবনা রয়েছে, লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে যাওয়ার সে সম্ভাবনা অনেক কম।
রাতের বেলা কঠিন বিষয় পড়া থেকে বিরত থাকুন: রাতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যদি ভোরবেলা চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে তখন নির্ভার মনে কঠিন বিষয়টি পড়ে সহজেই সেটি বুঝে ফেলতে পারবেন। সুতরাং কঠিন বিষয়গুলো পরদিন ভোরবেলার জন্য তুলে রাখুন, রাতে কেবল সহজ ও আগ্রহোদ্দীপক বিষয়গুলোই পড়ুন।
গ্রুপ স্টাডি করুন: একা একা পড়া অনেকের কাছেই একঘেয়ে একটা ব্যাপার মনে হতে পারে। কিন্তু এক বা একাধিক বন্ধুকে নিয়ে যদি গ্রুপ স্টাডি করা যায়, তাহলে একাকীত্ব দূর হয়, পড়াশোনাকে একঘেয়ে মনে না হয়ে বিনোদনমূলক মনে হয়, এবং একজন কোনো পড়া না পারলে দ্রুতই অন্যজনের কাছ থেকে সেটা বুঝে নেয়া যায়। আর কেউ সেটা না পারলেও কিন্তু ক্ষতি নেই।
চুইংগাম চিবান কিংবা চা-কফি পান করুন: চুইংগাম চিবাতে থাকা মানে একটি সক্রিয় শারীরিক কর্মকান্ডে যোগ দেয়া, যাতে করে আপনার মস্তিষ্ক পূর্বাপেক্ষা বেশি সচল হয়ে উঠবে। এছাড়া ঘুম তাড়াতে চা বা কফি জাতীয় পানীয় পান করাও যেতে পারে।
ঠান্ডা পানি: পড়ার সময় চেষ্টা করবেন হাতের কাছে পানি রাখার। কারণ ঘুম পেলে উঠে যেতে ইচ্ছে করে না। যখন আপনি ঘুম অনুভব করবেন ঠিক তখন এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করুন এবং রুমাল ওই ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে দু চোখ মুছে নিন। দেখবেন ঘুম জানালা দিয়ে পালাবে।