বাংলাদেশ অপরাজিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
বুক উঁচিয়ে লড়ে গেছে বাংলার যুবারা। ভাষার মাসে লাল-সবুজের গৌরবময় স্মৃতি আরো গৌরবময় করে দিয়েছে ক্ষুদে টাইগাররা। ভারতকে তিন উইকেটে হারিয়ে এই প্রথম যুব বিশ্বকাপের শিরোপা বাংলাদেশের ঘরে।
বাংলার যুবাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ গত বছর ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেই শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল বাংলাদেশের যুবাদের। সেই স্মৃতি এখনো টগবগে আকবরদের বুকে।
কিন্তু এবার আর হারেনি তারা। ভারতকে হারিয়ে শিরোপা নিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে যুব টাইগাররা। ৪১ ওভার চার বলের সময় রাকিবুল হাসানের চার এরপই ম্যাচ চলে আসে বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। এরপর শুধুই উল্লাস। গ্যালারিতে বসা দর্শকরাও বাংলাদেশের সাথে গর্জে উঠলেন পুরো স্টেডিয়ামে।
৪১ ওভারের খেলা শেষে বৃষ্টি বাধায় খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। কিন্তু একটু পরই খেলা আবার মাঠে গড়ায়। তবে বৃষ্টি না থাকলেও সমস্যা ছিলো না বাংলাদেশের জন্য। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ জয়ী হতো। তবে বৃষ্টি আইনে ৩০ বলে সাত রান নির্ধারণ করা হয়। ফাইনাল খেলা দেখার জন্য রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র টিএসসি এবং শাহবাগে বসানো হয় প্রজেক্টর। সেখানে খেলা উটভোগ করেন বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা। ম্যাচসেরা হয়েছেন যুব ক্যাপ্টেন আকবর আলী।
অধিনায়ক আকবর আলীর দায়িত্বশীল ব্যাটে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপা অর্জন বাংলাশের। টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে তিন উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৭৭ রানে অলআউট হয় ভারত। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২৩ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে আকবর আলীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল।
এর আগে উদ্বোধনীতে পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে ৮.৫ ওভারে ৫০ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান তানজিদ হাসান। বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ২৫ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৭ রান করে ফেরেন তরুণ এ ওপেনার।
উড়ন্ত সূচনার পরও সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ৬৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে একঘরে হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ভারতীয় লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণুর বল খেলতেই পারছিলেন না বাংলাদেশের যুবারা।
নিজের করা প্রথম চার ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান ১৯ বছর বয়সি ভারতীয় এ লেগ স্পিনার। ১৩তম ওভারে রবি বিষ্ণুর বলে আউট হয়ে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়। ওই ওভারেই পায়ে ব্যথা পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন।
তৃতীয় উইকেট পতনের পর ব্যাটিংয়ে নামেন অধিনায়ক আকবর আলী। ইমন আউট হওয়ার পর শূন্য রানের ব্যবধানে ফেরেন তাওহিদ হূদয়। দলীয় ৬৫ রানে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে আউট হয়ে ফেরেন শাহাদাত হোসেন।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আকবর আলীকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি শামিম হোসেনও। তিনি ২০ রানের জুটি গড়ে আউট হন। এরপর আকবর আলীর সঙ্গে ১৭ রানের জুটি গড়তেই আউট হয়ে যান অভিষেক দাস। ২৩ ওভারে দলীয় ১০২ রানে সাত উইকেট পতনের পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরা ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ফের ব্যাটিংয়ে নামেন। সপ্তম উইকেটে ইমনকে সঙ্গে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েন আকবর আলী।
তাদের এই জুটিতেই জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। শেষ দিকে জয়ের জন্য ১০৯ বলে প্রয়োজন ছিলো মাত্র ৩৫ রান। খেলার এমন অবস্থায় সজোরে ব্যাট চালাতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ইমন। তার আগে ৭৯ বলে সাতটি চারের সাহায্যে করেন ৪৭ রান। ১৪৩ রানে সাত উইকেট পতনের পর পরপর দুই ওভার মেডেন দেন আকবর আলী ও রাকিবুল হাসান।
এর আগে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে টসে জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের যুবাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চাপে পড়ে যায় ভারতীয় যুবারা। তানজিম হাসান সাকিব আর শরিফুল ইসলাম মিলে প্রথম ছয় ওভারে খরচ করেছেন মাত্র আট রান।
এরপর সপ্তম ওভারে এসেই মেডেন ওভারের পাশাপাশি এক উইকেট তুলে নেন অভিষেক। তবে প্রথম উইকেট হারানোর পর থেকেই উইকেট ধরে রাখায় মনোযোগ বাড়ায় ভারত। দুই ব্যাটসম্যান জসওয়াল ও তিলক মিলে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকেন। এমনকি মাঝে ৫০ বলে কোনো বাউন্ডারিও হাঁকাননি তারা। ২৫ ওভারের পর থেকে রান তোলার দিকে ঝুঁকতে শুরু করে ভারত।
তবে সাকিবের বলে তিলকের বিদায়ে বড় ধাক্কাই খায় দলটি। শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৫ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। এরপর দলীয় ১১৪ রানে প্রিয়মকে হারায় ভারত। ভারতের যুব অধিনায়ককে সাজঘরে ফেরান রাকিবুল হাসান। সতীর্থদের যাওয়া-আসার মাঝে মাঠে লড়াই করতে থাকেন জসওয়াল।
কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে ১২ রান দূরে থাকতে শরীফুলের বলে তানজিদের হাতে বন্দি হন তিনি। তার ১২১ বলে ৮৮ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিলো সাত চার ও এক ছক্কায়। জসওয়ালকে বিদায়ে দেয়ার বলেই সিদ্ধেশ ভীরকে শূন্যহাতে সাজঘরে ফেরান শরীফুল।
এরপর রানআউটের শিকার হয়ে বিদায় নেন উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুয়েল। রানআউট হন রবিও। এরপর অভিষেক এসে বোল্ড করেন অথর্বকে। কার্তিক তিয়াগিকে ডাক উপহার দিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন অভিষেক।
এরপর শেষ উইকেট হিসেবে আউট হন সুশান্ত মিশ্র। এক রানে অপরাজিত ছিলেন আকাশ সিং। চলতি আসরের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ছয় উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে স্বপ্নের ফাইনালে ওঠে আকবর আলীর দল।